আমি অনেক দিন ব্লগ লিখিনা | প্রধান কারণ দুটি | এক, মনের সময়ের অভাব | দুই, লেখার মত বিষয়ের অভাব |
মনের সময়ের অভাব মানে কি বলতে চাইলাম ? এর মানে এই যে সময় হয়তো আমি পেয়েইছিলাম, কিন্তু কিছু লেখার মত সময় জোগাড় করে উঠতে পারিনি | প্রথম করোনা ঢেউয়ের সময় অনেক দিন কলেজ বন্ধ ছিল, তখন তো সময় পেয়েছিলাম, কিন্তু লেখার মত মানসিক অবস্থায় পৌঁছাতে পারিনি | আমি যদি পেশাদার লেখক হোতাম তাহলে তো লিখতেই হত, কিন্তু যেহেতু নই, তাই আর লেখালেখি করা হয়নি | তারপর যখন কলেজ শুরু হলো, একেবারে দ্রুতগতির দুরন্ত ট্রেনের মতো দৌড়ানো শুরু হলো | খুব কম সময়ের মধ্যে এক একটা সেমেস্টার শেষ করার নির্দেশ, ছাত্র ছাত্রীদের মতো আমাদের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করলো | সরকারী ক্যালেন্ডারে কিছু ছুটি থাকলেও আমাদের সে ছুটি নেওয়ার উপায় ছিল না | শেষ পর্যন্ত আজ একটা ছুটি পেলাম আর হঠাৎ করেই মনে হলো কিছু লিখি |
দ্বিতীয় কারণ, করোনার আতঙ্কে আতঙ্কিত | কিন্তু আমি করোনা নিয়ে লিখতে চাইনি | করোনার কারণে দীর্ঘদিন কোথাও ঘুরতে যাইনি, তাই ট্রাভেল ব্লগ লেখারও কোনো উপায় ছিল না |
আজকে আমার লেখার বিষয় বর্তমানের মহামারী পরিস্থিতির সাপেক্ষে একদমই অপ্রাসঙ্গিক, তবুও যেহেতু মনে হলো তাই লিখছি | করোনার কথা লিখব না যদিও বললাম, কিন্তু আমার লেখা শুরুই করছি সেই করোনা দিয়েই |
-------
করোনা আবহে আমি বাবাকে আর বাজার যেতে দিইনা | আমি যাই আর একসাথে অনেক কিছু কিনে আনি | সেই প্রসঙ্গে মা একদিন বললেন - দেখেছ, মেয়ে কি দ্রুত কি সুন্দর বাজার করে, কত কিছু আনে, তোমার তো ভাবতে ভাবতেই সময় কেটে যায় | তাতে বাবার উত্তর, আমি যখন চাকরি শুরু করেছি, তখন আমার মাইনে ৫০০ টাকা ছিল, তাই বাজারে গেলে আমাকে ভাবতে হত, সেই অভ্যাস কি এত সহজে যায়? আমি ভেবে দেখলাম, কথাটা অযৌক্তিক নয়, কিন্তু তাই বলে আমিও যে বেহিসাবী তাও নয় | বর্তমানে কেউ বাজারে গেলে একদিনেই ৫০০ টাকা খরচ হয়ে যায় | তাই, খুব হিসাব করে বাজার করে যে খুব লাভ হবে, সেটা হয়তো আমি ভাবিনা |
দ্বিতীয়ত, আমাদের আগের প্রজন্মের মানুষদের সঞ্চয়ের মানসিকতা ছিল, তারা কৃচ্ছসাধন করেও সঞ্চয় করতেন | আমাদের সেই মানসিকতা নেই | আমরা মুহুর্তের জন্য বাঁচি | কারণ, আমরা বুঝি যে, আজ ভালো করে না খেয়ে, ভালো করে না বেঁচে, কোনো লাভ নেই | আমার আজকের সঞ্চয় আগামীকাল কাজে নাও আসতে পারে |
আমরা যে সময়ের মধ্যে বেঁচে আছি, সেখানে আমরা দেশে দেশে অর্থনৈতিক পতন দেখেছি/দেখছি | খুব সাম্প্রতিক কালে আমরা গ্রীসের অর্থনৈতিক পতনের কথা জেনেছি, যা ২০১৪/২০১৫ সালে মারাত্মক রূপ ধারণ করেছিল | মধ্যবিত্ত চোখের পলকে ভিখারী হয়েছিল | সেখানে একটা স্যান্ডউইচের জন্য একটা মেয়েকে রাতের পথে নামতে হয়েছে, সেই খবর আমরা সংবাদপত্র থেকেই পেয়েছিলাম |
আবার, আমাদের নিজেদের দেশেই এক রাতের মধ্যে ৫০০, ১০০০ টাকার নোট অচল হয়ে গেছে | নিজের ঘরে টাকা রেখে সঞ্চয় করেছিলেন যারা, তাদের দিনের পর দিন ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়াতে হয়েছে| সেই অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা মানুষকে সঞ্চয় বিমুখ করেছে |
এদিকে আবার ব্যাঙ্কে টাকা জমাবো, তার উপায় নেই | চোখের সামনে পর পর সরকারী ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে | সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্কে ১ কোটি জমানো থাকলেও যা, ৫ লক্ষ থাকলেও তাই | তার উপর আবার দিন দিন সুদ কমছে জমানো টাকার উপর | তাই আজ থেকে ১০ বছর আগে ফিক্সড ডিপোজিট করে টাকা যেভাবে বাড়তো, আজ তার অর্ধেকও বাড়ে না |
আমি পিএইচডি করার সময় আমার বরের থেকে ৪/৫ গুণ টাকা বেশী পেতাম, ইউকে তে পিএইচডি করার সুবাদে | কিন্তু আমি কিছুই জমাতে পারিনি | কারণ, ওখানে ব্যাঙ্কে টাকা রাখা আর ঘরের সিন্দুকে টাকা রাখা একই ব্যাপার | এক পেনিও সুদ নেই | ঠিক তেমনি ভাবেই আমার বাবার থেকে অনেক বেশি আয় করেও আমি চাইলেও কিছুই জমাতে পারব না | সামাজিক সুযোগ সুবিধাতে ভারত ইউকের ধারে কাছে পৌঁছাতে না পারলেও, ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত নিয়মাবলীতে ইউকে-কে টপকে যাবার চেষ্টা করছে |
সঞ্চয়ে অনীহার আরো অনেক কারণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো - দিন দিন টাকার মূল্য কমছে | আমাদের আগের প্রজন্ম ১০ লক্ষ টাকা জমিয়ে বলতে পারত, আমার মেয়ের পড়াশুনো, বিয়ে নিয়ে আর চিন্তা নেই | ১০ লক্ষ টাকায় মেয়েকে M.Sc পর্যন্ত পড়িয়ে, ধূমধাম করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া যেত, এমনকি নাতনির জন্য সোনার হার গড়িয়ে দেওয়া যেত |
কিন্তু আমি বা আমার প্রজন্মের কেউই এই রকম কথা বলতে পারিনা | করোনার কথা বলতে চাইনা, কিন্তু সে আসছেই | আমরা রোজ সংবাদপত্রে দেখছি করোনা চিকিৎসায় লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে | খুব সম্প্রতি একজন tollywood অভিনেতা এই বিষয়ে অনুযোগ জানিয়েছেন যে ওনার আত্মীয়র হাসপাতালে থেকে করোনা চিকিৎসা করিয়ে খরচ হয়েছে ১৮ লক্ষ টাকা | ভাবা যায়? তার সারাজীবনের সঞ্চয় ১৮ দিনে শেষ |
এই অস্থির সময়ে আমরা কোন ভরসায় টাকা জমাবো ? আর কেনই বা কৃচ্ছসাধন করবো ?
আমি যত টাকাই জমাই না কেন সেটা কমই হবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মর জন্য | তাদেরকে নিজের পড়াশুনো জন্য student loan নিতে হবে | তারপর সারাজীবন চাকরী করে সেই loan শোধ করতে হবে |যেটা ইউকে, আমেরিকাতে হয়, আমাদের ভারতও সেই দিকেই এগোচ্ছে |
এতো গেল, টাকা জমানোর তাগিদে আমাদের বাবামায়েদের কৃচ্ছসাধন | এবার আসি পরিবারের চৌহদ্দিতে মায়েদের কৃচ্ছসাধনের গল্পে | বাবারাও নিশ্চয় করেন, আমি মেয়ে বলেই হয়তো মায়েদের কৃচ্ছসাধন বেশী নজরে পড়ে |
মায়েরা কথায় কথায় উপোষ করেন, সবচেয়ে ছোট মাছটা খান, কেউবা খানই না | কিন্তু কেন? কারণ, জন্ম থেকেই তাদের মাথায় ঢুকে গেছে যে যত বেশী নিজেকে কষ্ট দিতে পারবে, সে স্ত্রী হিসাবে, মা হিসাবে তত সফল | হয়তো দেখা যাচ্ছে, তার নিজের স্বামী, বৌ-এর উপোষ করার পক্ষে না, ছেলেও চাইছে না, মা না খেয়ে থাকুন | কিন্তু তিনি সবার উপরোধ অনুরোধ উপেক্ষা করেই নিজের মতেই চলছেন | কারণ আজন্মলালিত মানসিক বন্ধন থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষমতা ওনার নেই |
আমার মা কখোনই অন্ধধার্মিক নন | উপোষ, বা ভাতের বদলে রুটি খাওয়ার ঘটনা আমাদের বাড়িতে খুবই সীমিত | মা যেহেতু ব্যাঙ্কে চাকরী করতেন, তিনি এই সারমর্মটি বুঝে গেছিলেন, খালি পেটে আর যায় হোক, হাজার হাজার গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা মেলানো যায় না | তাই, খাওয়ার ব্যাপারে কৃচ্ছসাধন না করলেও উনি যেটা করতেন, সেটা হলো অমানুষিক পরিশ্রম করা |
আমরা অফিস থেকে ফিরে বসি, উনি বসতেন না | শনিবার অর্ধেক ছুটি, তাই বাড়ি ফিরেই উনি বসে যেতেন কুলোয় করে চাল, ডাল ঝাড়াই বাছাই করতে | আমাদের বড় উঠোন ছিল/আছে | প্রতি শনিবার সেটা যে নিকাতেই হবে, এমন নিয়ম কোথাও না লেখা থাকলেও, আমার মা নিজের গড়া নিয়ম ভাঙতেন না | আর রোববারের কথা ছেড়েই দিলাম, কি কি করতেন তার তালিকা দীর্ঘ, শুধু এই টুকু বলি যে উনি কখোনই ৩-টের আগে স্নান করতেন না | যে মহিলা রোজ ৯ টায় ভাত খেয়ে অফিস যেতেন, তার এমন অনিয়ম শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে সে তো জানা কথা | আর হয়েছেও তাই |
আমার শশ্রুমাতা পুত্রসন্তানের জননী, তিনি অতীতে ভাবতেই পারেন, আমি না খেয়ে, বেশি বেশি কাজ করে শরীর ভেঙ্গে ফেললেও ক্ষতি নেই, ছেলে তো বৌমা আনবেই | কিন্তু আমার মায়ের ক্ষেত্রে তো সেই কারণ খাটে না | তাহলে কেন এত বেশি খেটে নিজের ক্ষতি করলেন?
এটাও সেই মানসিক বন্ধন | আমার মা যখন চাকরী করতেন, আমাদের সীমান্তবর্তী সেই গ্রামে হাতে গোনা মহিলারা চাকরী করতেন, আর ব্যাঙ্কে চাকরীরত মহিলা একমাত্র আমার মা-ই ছিলেন | আমার মা আমাদের বড় করেছেন যে আধুনিক মানসিকতায়, সেই আধুনিকতা তিনি নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারেননি | আজ আনন্দবাজার পত্রিকাতে সন্তান মানুষ করা নিয়ে যে সমস্ত প্রতিবেদন দেয়, আমার মা ৩০ বছর আগে সেইভাবে আমাদের মানুষ করেছেন | আমার মা সময়ের থেকে অনেক এগিয়েই ছিলেন | এখন উনি পূর্ণ সময়ের লেখিকা | ওনার লেখা যারা পড়েন/পড়েছেন তারা এটা ইতিমধ্যেই জানেন |
কিন্তু উনি নিজে যখন চাকরী করতেন, তখন mainstream media (সিনেমা, গল্প) -তে চাকরী করা, উচ্চাকাক্ষী মহিলাদের villain হিসাবে দেখানো হতো | আজ অপরাজিত অপুতে অপু যে লড়াই করছে, আজ থেকে ৩০ বছর আগেই মা সেটা করে ফেলেছেন | কলকাতা শহরের কোনো ব্যাঙ্কে চাকরী করলে কি হতো জানিনা; কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামে, অঙ্কে স্নাতোকোত্তর ব্যাঙ্ককর্মী মহিলাকে ঘিরে প্রচুর কৌতুহলী মানুষের আনাগোনা থাকলেও, মায়ের কোনো বন্ধু ছিল না | আমাকে আর আমার দিদিকে রোজ এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হত যে, আমার মা আজ কি রান্না করেছে? মনে হতো যেন, আমরা না খেয়ে বেঁচে আছি | 😆😆😆
এই সামাজিক প্রেক্ষাপটে, একজন মহিলা কিভাবে বসে থাকবেন বা নিজেকে সময় দেবেন? নিজেকে সময় দেওয়া মানে বিলাসিতা | মা আর বিলাসিতা দুটি বিপরীতার্থক শব্দ | তাই, আমার মা নিজেকে নিংড়ে নিয়ে কাজ করতেন | অফিস করার জন্য যে সময়টা বাড়িতে দিতে পারতেন না, সেইটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন দেড় দিনে |
পরশু দিন Instagram-এ একটা post দেখলাম | একজন মহিলা নাকে oxygen concentration লাগিয়ে রুটি করছেন | রান্নাঘর দেখে তো বেশ সম্পন্ন বাড়ি বলেই মনে হলো | সেই ছবির উপরে লেখা - মা কা প্যার কা কোই তুলনা নেহি (something like that) | যিনি ছবিটা দিয়েছেন তিনি Caption-এ লিখেছেন, এটা কোথাকার ছবি জানিনা, কিন্তু যে ছবিটা তুলেছে, সে ছবি না তুলে রুটি করতে পারতো | আমি লেখকের সাথে সহমত | It is a kind of exploitation of human rights. এটা একধরনের দাসত্ব যাকে মহিমান্বিত করা হয়েছে | এই দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসার মানসিক ক্ষমতা এখনো অনেক মায়েরাই জোগাড় করতে পারেননি | আমার মা পেরেছেন, প্রধানত তার শারীরিক অবস্থার জন্যই পেরেছেন |
আমি বা দিদি কিন্তু এমন নই | আমরা প্রয়োজন মত খাবারও খাই | কাজ করার দরকার হলে করি, কাজের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেও পিছপা হইনা | সেইজন্যই আমরা সঞ্চয় করতেও পারিনা | 😆😆😆😆
ঘর ঝাঁট দেয়ার জন্য vacuum cleaner, মোছার জন্য mop সবই কিনে ফেলি | সবাইকে ভালো কাপে চা দিয়ে নিজেকে কষ্ট দিয়ে ভাঙ্গা কাপে চা আমরা মোটেই খাই না | আমি যেহেতু জামাকাপড় iron করি সেইজন্য আমার বরকে বলে আমার জন্মদিনের উপহার হিসাবে একটা iron স্ট্যান্ডও কিনিয়েছি | (বরের যদিও প্রবল আপত্তি ছিল, জন্মদিনে কোথায় আরাম করার জিনিস নেবো তা নয়, পরিশ্রম করার জিনিস নিচ্ছি) | মা সারাজীবন খাটের উপর জামাকাপড় রেখে কোমর বেঁকিয়ে iron করেছেন, কিন্তু একবারের জন্যও ভাবেননি একটা কাঠের বেঞ্চি করলে হয় | একজন ব্যাঙ্ককর্মী একটা কাঠের বেঞ্চি চাইলেই করাতে পারতেন | তার উপর, আমাদের বাড়িতে মাঝে মধ্যেই কাঠের কাজ চলত, করালে করাই যেত কিন্তু কারো মনে হয়নি | আর এখন কোমরের সমস্যায় বেশিক্ষণ বসতেও পারেননা |
অথচ যেটা করেছেন, সেটা হচ্ছে ভালো ভালো কাপ প্লেট showcase-এ তুলে রেখেছেন | কেন? অতিথিদের জন্য | আমার দিদির বিয়ের কথাবার্তার জন্য যে কাপ প্লেটগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল, দিদির বিয়ের পরে ১৪ বছরে সেগুলো ১৪ তো দূর, ৪ বার ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সন্দেহ | আমি খুব একটা না হলেও, আমার দিদি এই ব্যবস্থার সাংঘাতিক বিরুদ্ধে | আমি খুব বিরুদ্ধে নই, কারণ আমার মা সেই সব বাসন তুলে রাখলেও মোটেও খারাপ বাসনে খাওয়া দাওয়া করেন না | বরং বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর করে অনেক বাটি নিয়ে ভালো করে ভাত সাজিয়েই আমার মা খাবার খান | কিন্তু অনেক বাড়িতেই মায়েরা ভাঙ্গা কাপে চা খান, আর ভালো বাসন আলমারীতে তুলে রাখেন | কেন ? ভবিষ্যত প্রজন্মকে দেবেন বলে? হয়তো তাই | যেমন, গয়না না পরে তুলে রাখতেন আমাদের সামনের বাড়ির কাকিমা | আমরা সারাজীবন শুনেই গেলাম উনি ১৫ ভরি গয়না পেয়েছিলেন বাপের বাড়ি থেকে | কিন্তু জীবনে গলার হার তো দূর, ওনার হাতের চুড়ি পর্যন্ত দেখিনি |
আমাদের প্রজন্ম কি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই কৃচ্ছ সাধন করবে? মনে হয় না | আর করার কোনো অর্থও নেই |
১৭০০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে মানুষের মানসিকতা যেভাবে বদলাতো, আজ ৫ বছরেই তার থেকে বেশী হারে বদলাচ্ছে | ব্যক্তিগতভাবে, সাজ পোশাক, গয়নাগাটি নিয়ে আমি মোটেও ভাবিত নই, সেই বিষয়ে মন দিতেও আমি ইচ্ছুক নই | এই যুগে বিয়ে করেও আমি নিজের বিয়ের শাড়ি, গয়নাগাটি কোনো কিছুই আমি নিজে গিয়ে কিনিনি |
কিন্তু এখনকার দিনের বেশিরভাগ মানুষের পছন্দ অপছন্দ প্রবল | মায়ের সারাজীবন তুলে রাখা গয়না মেয়ের পচ্ছন্দ নাও হতে পারে | আবার মায়ের পিতল কাঁসার বাসন মেয়ের কাজে নাও লাগতে পারে, কারণ মেয়ে ব্যবহার করে dishwasher, microwave oven যেখানে এই ধাতুর পাত্র ব্যবহার যোগ্য নয় | দুনিয়া এত দ্রুত বদলাচ্ছে যে মানুষের রুচি, চাহিদা মুহুর্তে মুহুর্তে পরিবর্তিত হচ্ছে |
সেই সময়ে দাড়িয়ে, আলমারীতে বাসন তুলে রেখে কি লাভ ?
তাহলে কি আমাদের বাবা মায়ের কৃচ্ছসাধন ভুল ছিল? আমার মতে, সঞ্চয়ের বিষয়ে কৃচ্ছসাধন মোটেই ভুল ছিল না, কারণ সেই সঞ্চয়ের ভবিষ্যত ছিল |
মায়েদের শারীরিক কৃচ্ছসাধন ভুল ছিল? সংক্ষিপ্ত উত্তর - হ্যাঁ |
আর আমরা যে কৃচ্ছসাধন করিনা সেটা কি ভুল?
সেটার উত্তর আমার জানা নেই | আমার পরবর্তী প্রজন্ম সেটার উত্তর দেবে | যেমন আমি আজ আমার পূর্ব প্রজন্মের কথা বললাম, সেই ভাবে তারাও একদিন আমাদের ভাবনাকে বিশ্লেষণ করবে | সেই উত্তরের জন্য বরং অপেক্ষা করা যাক |